AdSpot-1

Gen Z কি? জেন জি প্রজন্ম কেন প্রতিবাদী হয়ে উঠছে?

লেখক: agdum.com
প্রকাশিত হয়েছে: ৫ মাস আগে

‘Generation Zee’র নাম শুনলেই এখন সবাই একটু নড়েচড়ে বসছেন। কারণটি কারও অজানা নয়। এই প্রজন্মের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিপ্লব দেখেছে গোটা বিশ্ব। ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট। তাদের মাত্র দুই মাসের সরকার-বিরোধী আন্দোলনে পতন হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারী প্রধানমন্ত্রীর।

‘Generation Zee’ কারা? তারা কেমন বৈশিষ্ট্যের? আর কেনই বা তারা বিপ্লবী হয়ে উঠেছে? এ সব প্রশ্নের উত্তর থাকবে আজকের ভিডিওতে। তবে ‘Generation Zee’ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমরা ‘Generation’ বা ‘প্রজন্ম’-এর ধারণার সাথে কিছুটা পরিচিত হয়ে নেবো।

প্রজন্মের ধারণা

একই প্রজন্মের মানুষের মধ্যে প্রধানতঃ দু’টি বিষয়ে মিল থাকে। প্রথমত, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। আর দ্বিতীয়ত, সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা মোটামুটি একটি স্বতন্ত্র ধারণা পোষণ করেন।

মোটা দাগে, একই প্রজন্মের মানুষের মধ্যে একই ধাঁচের মতাদর্শ, মূল্যবোধ, আচরণ বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়। সমাজ বিজ্ঞানীরা গত একশ বছরের মানুষকে এইভাবে বিভিন্ন প্রজন্মে বিভক্ত করেছেন।

জন্ম সালপ্রজন্ম
১৯০১-১৯২৭গ্রেটেস্ট জেনারেশন
১৯২৮-১৯৪৫সাইলেন্ট জেনারেশন
১৯৪৬-১৯৬৪বেবি  বুমার্স
১৯৬৫-১৯৮০জেনারেশন এক্স
১৯৮১-১৯৯৬জেনারেশন ওয়াই / মিলেনিয়ালস
১৯৯৭-২০১২জেনারেশন জি /  জুমার্স
২০১০-২০২০জেনারেশন আলফা

‘Gen Zee’ এর পরিচয়

আমাদের আজকের টপিক ‘Gen Zee’। মূলত, ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে এই প্রজন্মে ফেলেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

এখানে বলে রাখি, ইংরেজি alphabet-এর সর্বশেষ letter-কে ব্রিটিশ স্টাইলে ‘Zed’ বলা হলেও আমেরিকান স্টাইলে বলা হয় ‘Zee’। তাই, এই প্রজন্মকে ইংলিশে ‘Gen Zed’ বা ‘Gen Zee’ দুই ভাবেই ডাকা যায়।

আজকের পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষের পরিচয়, তারা ‘Gen Zee’। এই প্রজন্মের সবচেয়ে সিনিয়র যারা, তারা সবে মাত্র পড়াশুনার গণ্ডি পেড়িয়েছেন। ঢুকছেন কর্মক্ষেত্রে। আর তাতেই প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, বাণিজ্য এমনকি রাজনীতিতে আসছে বড় পরিবর্তন।

‘Gen Zee’ এবং ইন্টারনেট প্রযুক্তি

১৯৯৭ সালকে ‘Gen Zee’ প্রজন্মের শুরু হিসেবে বিবেচনার প্রধান কারণ হচ্ছে ইন্টারনেট। সময়সাময়িক সময়ে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। ফলে জন্ম থেকেই ইন্টারনেটকে এ প্রজন্ম দেখেছে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে।

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদের কাছে ইন্টারনেট কখনো কোনো সাইন্স ফিকশন ছিল না; বরং তারা ইন্টারনেটকে দেখেন সময়ের অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা হিসেবে।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই প্রজন্ম প্রযুক্তির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। ইন্টারনেটে তারা অর্থ উপার্জন করছেন, কেনাকাটা করছেন, এমনকি বন্ধু বানাচ্ছেনও অনলাইনে।

গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ায় একজন Gen Zee দিনে গড়ে ৬ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্নতা মানেই এই প্রজন্মের জন্য স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন।

যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে Gen Zee-er’রা (উচ্চারণ: জেন জি’য়াররা) ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হন। যেমন- কোনো তথ্য ভেরিফাই করা বা কোনো কিছু কেনার আগে অনলাইনে রিভিউ দেখা।

বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে তারা নিজেদের কাজগুলো সহজ করার চেষ্টা করেন।

ব্যক্তি জীবনে তারা হতে পারেন আগোছালো, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিত্ব মেইনটেইন করেন।

ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর উত্থান Gen Zee-er’দের হাত ধরেই। এই প্রজন্মের মানুষেরা নগদ অর্থের থেকে ডিজিটাল কারেন্সিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

মূলধারার গণমাধ্যম বলতে বয়োজেষ্ঠ্যরা যেসব মিডিয়া চেনেন, যেমন- টেলিভিশন বা রেডিও, এই প্রজন্মের কাছে সেগুলো আকর্ষণ হারিয়েছে।

টেলিভিশন বা রেডিও-এর বদলে এই প্রজন্ম ঝুঁকেছে new media হিসেবে পরিচিত অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট কিংবা পডকাস্ট এর প্রতি।

Gen Zee মানেই নতুনত্ব

আগের প্রজন্মগুলোর মধ্যে কোনো কিছুর স্থায়ী মালিকানার প্রতি ঝোঁক ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে Gen Zee-er’রা ‘লিভিং ইন দ্যা মোমেন্ট’-এ বিশ্বাসী।

তারা স্থায়ী মালিকানার পরিবর্তে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে স্বল্পকালীন সেবা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। উদাহরণস্বরূপ, মুভি বা মিউজিক ভিডিও-এর সিডি বা ডিভিডি বিক্রির চল এখন আর নেই; আছে নেটফ্লিক্স বা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাসিক সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সেবা।

এই প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে আসছে ‘গিগ ইকোনোমি’, যেখানে থাকছে না কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির প্রতি লং টার্ম কমিটমেন্ট। স্বাধীনভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজের মাধ্যমে মানুষ জীবিকা অর্জন করছেন। ফ্রিল্যান্সিং, রাইড শেয়ারিং, রিমোট জব প্রভৃতি গিগ ইকোনোমির কয়েকটি উদাহরণ।

Gen Zee কেন প্রতিবাদী

খুব কম সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীতে বেশ কিছু নেতিবাচক ঘটনার সাক্ষী Gen Zee।

দেশে দেশে পরাশক্তিদের সামরিক আগ্রাশন, জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং, করোনা মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা, মূল্যস্ফীতির মতো বিভিন্ন অস্থিরতা দেখে তারা বড় হয়েছেন।

তাই পূর্ববর্তী প্রজন্ম তাদের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাচ্ছেন, এমন আস্থা Gen Zee-er’দের মধ্যে কখনোই গড়ে ওঠেনি।

Gen Zee-er’রা মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সুযোগগুলো তাদের জন্য আরও সংকুচিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে এই প্রজন্মের মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করে।

এই হতাশা থেকে তারা প্রায়ই প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ফলে এদের মধ্যে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দাবি লক্ষ্য করা যায়।

সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, নতুন এই প্রজন্ম জাতিগত ভেদাভেদ বা মানুষে মানুষে বৈষম্যের ঘোর বিরোধী। এরা সমাজের সকল মানুষের জন্য সমান সুযোগে বিশ্বাসী।

এ কারণেই গাজা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসন যখন একপাক্ষিক, তখন সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামরিক আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সরব।

এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে বোঝাপড়ায় ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। ইংলিশে যাকে বলে ‘জেনারেশন গ্যাপ’। এই দূরত্ব যে সমাজে যত বেশি, সেই সমাজ ততো বেশি অস্থিতিশীল।

এই দূরত্ব ঘোঁচাতে বড়দেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীবাসীর প্রতি বার্তা, Gen Zee-erদের পথের বাধা সরিয়ে দিন, Gen Zee-erদের এগুতে দিন।

Comment here. (Refresh the page, if not working)
AdSpot-4
AdSpot-5
AdSpot-7
আমার ক্লাসের পড়া
খুঁজে দেখি
AdSpot-6