স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ৯টি ভয়াবহ বন্যার দুর্লভ দৃশ্য ও বন্যাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তথ্য থাকছে এই ভিডিওতে।
নদী হলো বাংলাদেশের প্রাণ। নদীতে প্রবাহমান বিশাল জলরাশি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু কখনো কখনো নদীর এই পানি দুকূল ছাপিয়ে যায়। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা।
বাংলাদেশে বন্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিবছরই নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়। তবে এর মধ্যে কিছু কিছু বন্যার ভয়াবহতা হয় অনেক ব্যাপক। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি শত শত মানুষের মৃত্যু হয় সেসব বন্যায়, যার দুঃখগাঁথা ভুলতে পারে না দেশের বানভাসী মানুষ।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় ১৯৭৪ সালে। এতে প্লাবিত হয় দেশের ৫৮% এলাকা। সরাসরি বন্যার কারণে মৃত্যু হয় ২,০০০ মানুষের। কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। নতুন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কারণে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সেই দুর্ভিক্ষে ২৭,০০০ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন। বেসরকারি হিসেবে, দুর্ভিক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে মৃতের সংখ্যা আনুমানিক ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ১৯৮৭ সালে আবারও বড় বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশ। এবারে প্লাবিত হয় দেশের ৪০% এলাকা। ১৯৮৭ সালের বন্যায় ২,০৫৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
দেশের ইতিহাসে ১৯৮৮ সালের বন্যাকে অন্যতম ভয়বহ বন্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বন্যায় বাংলাদেশের ৬১% এলাকা ডুবে যায়। রাজধানী ঢাকাও সে সময় বন্যা থেকে রেহাই পায়নি। এলাকাভেদে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী এই বন্যায় ২,০০০-৬,৫০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। ৪.৫ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ক্ষতি হয় ১২০ কোটি মার্কিন ডলার।
১০ বছর পর ১৯৯৮ সালে আবারো বন্যার ঘটনা ঘটে। এতে দেশের ৬৭% এলাকা প্লাবিত হয়। এই বন্যা ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়। বন্যায় মারা যান ১,১০০ জন মানুষ। ৩ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ক্ষতি হয় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার। এই বন্যায় দেশের কৃষি খাত ও অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশের ৩৮% এলাকায় ফের বন্যা দেখা দেয় ২০০৪ সালে। এই বন্যায় মৃত্যু হয় ৭০০ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত হন ৩৮ লক্ষ মানুষ। আর্থিক ক্ষতি হয় ৬৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
২০০৭ সালে দেশের ২১% এলাকা প্লাবিত হয়। এই বন্যায় ৬৪৯ জনের মৃত্যু হয়। ১০ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দেশের ৩২টি জেলা ২০১৭ সালে বন্যায় আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয় ১৪৫ জনের। ১ লক্ষ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন ৮০ লক্ষ মানুষ। বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যায় সড়ক, বেড়িবাঁধ ও রেললাইন। এ বছর ভারত, নেপাল ও ভুটানেও ব্যাপক বন্যা হয়।
দেশের ২৮টি জেলা ২০১৯ সালে বন্যায় আক্রান্ত হয়। ১১৯ জনের মৃত্যু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন ৭৬ লক্ষ মানুষ। ৫ লক্ষ ঘরবাড়ি আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়।
দেশের ৩০টি জেলা ২০২০ সালে আবারো বন্যার কবলে পরে। মোট ২৪% এলাকা এতে প্লাবিত হয়। মৃত্যু হয় ২২০ জনের। ৫৪ লক্ষ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন। এই বন্যায় ১২ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আর্থিক ক্ষতি হয় ৪০,০০০ কোটি টাকা।